সিভি কেমন হলে চাকুরি নিশ্চিত
চাকরির বাজারে কোন কোম্পানিতে সিভি দেয়ার মাধ্যমেই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু। কোম্পানি আবেদনকারীকে না দেখে তার সিভি দেখেই আবেদনকারীর যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পর্কে ধারনা লাভ করে।
তাই সিভি হওয়া চাই সুন্দর, সাবলীল ও তথ্যপূর্ন যা যথোপযুক্তভাবে আবেদনকারীকে উপস্থাপন করে।
এখন প্রশ্ন, সিভি কেমন হওয়া চাই? এ বিষয়ে আলোচনা করা যাক।
সিভির উপরে নিজের নাম বড় করে লিখুন যাতে সহজেই আপনাকে চিনতে পারা যায়। এর নিচে মেইল এড্রেস তথা বর্তমান ঠিকানা লিখুন। সাথে মোবাইল নম্বর ও ইমেইল আইডি দিন। আর হ্যাঁ, স্কাইপ আইডি ও লিঙ্কডইন আইডি থাকলে তাও দিতে ভুলবেন না।
মোবাইল নম্বর ও ইমেইল আইডি দেয়ার সময় তা সচল আছে কি না তা সর্তকতার সাথে যাচাই করে নিন। ইন্টারভিউয়ের জন্য একাধিক বার কল করার সময় কিন্তু চাকরিদাতার হাতে নেই। যে নম্বরটি সবসময় ব্যবহার করেন, সেটিই দিন। একাধিক মোবাইল নম্বর ও ইমেইল আইডি না দেয়াই ভালো।
ক্যারিয়ার অবজেকটিভ:
ক্যারিয়ার অবজেকটিভ বা পেশাগত উদ্দেশ্য লেখার সময় তা সহজ ও সাবলীল ভাষায় লিখুন। দুই বা তিনটি সরল বাক্যে আপনার ক্যারিয়ার প্ল্যান ও আপনার দক্ষতার ক্ষেত্রগুলো ফুটিয়ে তুলুন।
ধরুন, আপনি এইচআর অফিসার পদের জন্য সিভি লিখবেন। তাহলে লিখুন, আপনি নিজেকে এইচআর এ একজন দক্ষ প্রফেশনাল হিসেবে গড়ে তুলতে চান। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে (একটি নিদিষ্ঠ সময় উল্লেখ করুন) নিজের জ্ঞান, দক্ষতা, সামর্থ্য এবং সময় ও সুযোগের সবোত্তম ব্যবহার করে নিজেকে কোম্পানির ম্যানেজারিয়াল পজিশনে নিয়ে যেতে চান ইত্যাদি।
একটি ক্যারিয়ার অবজেকটিভ দিয়ে সব ধরনের চাকরির (এইচআর, সাপ্লাই চেইন, মার্কেটিং, অ্যাকাউন্টস, আইটি) জন্য সিভি চালিয়ে দিবেন না। যে পোষ্টের জন্য আবেদন করছেন সেই ক্যাটাগরি সম্পর্কে ক্যারিয়ার অবজেকটিভ লিখুন।
জব এক্সপেরিয়েন্স:
আপনার কাজের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করুন। এক্ষেত্রে কোম্পানির নাম, পজিশন, কর্মসময় ও সেই সময়ে আপনার কর্মদক্ষতা এবং আপনার অর্জনগুলো তুলে ধরুন। যেমন ধরুন, আপনি সেইবছরে কোম্পানির বেস্ট সেলস কর্মকর্তা হয়েছেন অথবা আপনার কোন প্ল্যানের কারণে কোম্পানির (%) সেলস বেড়েছে ইত্যাদি।
ফ্রেশাররা কি লিখবেন ভাবছেন?
আপনি কি আপনার শিক্ষাজীবনে কোন প্রোগ্রাম অরগানাইজ করেছেন? সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনে কাজ করেছেন অথবা বিভিন্ন ম্যাগাজিন পাবলিকেশনের দায়িত্ব পালন করেছেন? যদি করে থাকেন, এটাই আপনার অভিজ্ঞতা। ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট, প্রজেক্ট পেপার, ইন্টার্নশিপ থাকলে তাও অভিজ্ঞতা হিসেবে লিখুন।
প্রফেশনাল ডিগ্রি:
পেশাগত কোন ডিপ্লোমা বা উচ্চ কোন ডিগ্রি থাকলে উল্লেখ করুন। যারা সাপ্লাই চেইনে কাজ করেন তাদের PGDSCM, যারা এইচআর এ আছেন তারা PGDHRM করা থাকলে উল্লেখ করতে পারেন। অথবা কম্পিউটারে ছয় মাস বা এক বছরের ডিপ্লোমা করা থাকলে তা উল্লেখ করুন। যে কোন প্রফেশনাল ডিগ্রি সিভিতে উল্লেখ থাকলে এগুলো আপনাকে অন্যান্য আবেদনকারীদের থেকে আলাদা করে তুলবে।
শিক্ষাগত যোগ্যতা:
শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখার ক্ষেত্রে সর্বশেষ ডিগ্রিটি সবার প্রথমে লিখুন। আর হ্যাঁ, একাডেমিক কোন অজর্ন থাকলে তা তুলে ধরুন। যেমন ধরুন, আপনি এমবিএ তে বিভাগের প্রথম হয়েছেন- তা তুলে ধরতে পারেন ইত্যাদি।
ট্রেনিং:
পেশাগত অথবা যে কোন বিষয়ের উপর ট্রেনিং বা সেমিনারে অংশগ্রহণ করলে তা উল্লেখ করুন। যেমন, আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে লিডারশীপের উপর একদিনের কোন সেমিনারে অংশগ্রহন করেছেন তা তুলে ধরুন। এক্ষেত্রে ট্রেনিংয়ের বিষয়, ট্রেইনারের নাম, ট্রেনিং সময়কাল ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করতে পারেন।
বিশেষ দক্ষতা:
আপনার হয়তো খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহন করার ক্ষমতা আছে, অন্যকে সহজেই কনভিন্স করার ক্ষমতা আছে, টীম লিডারশীপ দক্ষতা আছে- এসব ব্যক্তিগত দক্ষতাগুলো ফুটিয়ে তুলুন। পাশাপাশি আপনি যে পেশায় আছেন সেই বিষয়ে বিশেষ দক্ষতাগুলোও উল্লেখ করতে পারেন। যেমন ভ্যাট ও ট্যাক্স সর্ম্পকে ভাল দক্ষতা, ভাল ট্রেনিং দিতে পারা, শ্রম আইনের উপর ভাল দখল, এলসি অপারেশনের উপর বিশেষ দক্ষতা ইত্যাদি।
কম্পিউটারের উপর কোন সার্টিফিকেশন কোর্স করা থাকলে উল্লেখ করুন। বিশেষ কোন দক্ষতা যেমন, ভালো এক্সেলের কাজ বা আকর্ষণীয় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বানাতে পারা অথবা প্রতি মিনিটে ৪০টি বাংলা শব্দ ও ৬০ টি ইংরেজী শব্দ টাইপ করতে পারা ইত্যাদি তুলে ধরতে পারেন।
আপনার কমিউনিকেশন স্কিল, বাংলা ও ইংরেজীর পাশাপাশি অন্য কোন ভাষা জানা থাকলে তা অবশ্যই উল্লেখ করবেন। ইংরেজীতে IELTS করা থাকলে তা লিখুন।
আপনার ইন্টারেস্টগুলো উল্লেখ করতে পারেন। যেমন আপনি গান গাইতে পছন্দ করেন, ফুলের বাগান করতে পছন্দ করেন বা টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখতে পছন্দ করেন ইত্যাদি। তবে, অতিরিক্ত বেশি কিছু না লেখাই ভালো।
পারসোনাল ইনফরমেশন বা ব্যক্তিগত তথ্য:
ব্যক্তিগত তথ্য যেমন বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্ম তারিখ, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্ম, রক্তের গ্রুপ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করুন। অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো এড়িয়ে যান।
ব্যক্তিগত তথ্য সিভির কোন ভ্যালু এড করেনা, এটা না দিলেও সমস্যা নাই কিন্তু যেহেতু আমাদের দেশে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার প্রচলন আছে তাই অনেকেই দেয়।
এক্সটা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ:
আমরা সচরাচর এক্সটা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ লেখার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ক্লাবের মেম্বার, ডিবেটিং সোসাইটির মেম্বার বা ভলান্টারি সংগঠন যেমন বিএনসিসি, রোটারী ক্লাব, লিও, ইউথ বয়েজ, ভলানটিয়ার ফর বাংলাদেশ ইত্যাদি বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নমূলক সংগঠনের সদস্য শুধুমাত্র তা উল্লেখ করে থাকি। কিন্তু সেই সংগঠনের সদস্য বা দায়িত্বে থাকাকালীন আমার কি কি পদক্ষেপ সংগঠনের উন্নয়নে ভূমিকা পালন করেছে তা উল্লেখ করি না। এক্ষেত্রে সিভিতে আপনার দক্ষতা ও অজর্নগুলোর কথা উল্লেখ করুন যা আপনার কমিউনিকেশন দক্ষতা ও নেতৃত্বের যোগ্য পরিচায়ক হিসেবে কাজ করবে। বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি এক্সটা কারিকুলাম এক্টিভিটিজ বা সফট স্কিল ডেভলাপমেন্টকে অনেক বেশী মূল্যায়ন করে থাকে।
রেফারেন্স:
আপনার সর্ম্পকে বেশ ভাল ধারনা রাখেন এমন দুইজনকে রেফারেন্স হিসেবে উল্লেখ করুন। এক্ষেত্রে একজন আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং অপরজন পেশাগত সর্ম্পকের তথা কর্মস্থলের সিনিয়র কাউকে রাখতে পারেন। অবশ্যই অনুমতি নিয়ে রেফারেন্সে তাঁদের নাম ব্যবহার করবেন। তাঁদের মোবাইল নম্বর ও ইমেইল আইডি ঠিকমত লিখুন। এমন কাউকে রেফারেন্স হিসেবে দিবেন না যিনি আপনার সম্পর্কে কিছুই জানেন না বা আপনার সাথে ভালো সম্পর্ক নেই। কারন অনেক সময় চাকরিদাতা আপনার সম্পর্কে জানার জন্য ক্রস ভেরিফাই করতে পারেন। এক্ষেত্রে যদি তারা আপনার সর্ম্পকে কিছুই বলতে না পারে তাহলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
ছবি:
আমরা ছবির বিষয়ে খুবই অবহেলা করি, কিন্তু এটি একটি সিভির অন্যতম গুরুত্বপূর্ন বিষয়। মনে রাখবেন, চাকরিদাতা কিন্তু আপনাকে সরাসরি দেখেননি বরং আপনার ছবি ও সিভি দেখে আপনার সম্পর্কে ধারনা লাভ করার চেষ্টা করেন। তাই অফিসিয়াল, ভাব গাম্ভীর্যপূর্ণ, মিষ্টি হাসি দিয়ে ভাল মানের ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি তুলুন। মোবাইল ক্যামেরা, ওয়েবক্যাম ও ফেইবুকে দেয়ার জন্য তোলা ছবি সিভিতে দেয়া থেকে বিরত থাকুন। আর হ্যাঁ কম্পিউটার প্রিন্টারের প্রিন্ট করা ছবি না দিয়ে স্টুডিও থেকে ভাল মানের ছবি প্রিন্ট করে সিভির সাথে সংযুক্ত করুন।
লেআউট:
সিভির লেআউট সাধারণ ফন্ট যেমন টাইমস নিউ রোমান বা এরিয়াল ইত্যাদি দিয়ে, ফন্ট সাইজ ১২ বা ১৩ রেখে এবং বেশি কালার ব্যবহার না করে দেখতে আকর্ষণীয় করে তৈরী করতে হবে। এফোর সাইজের ৮০ গ্রাম অফসেট পেপারে প্রিন্ট করা ভালো। সিভি সবসময় সরাসরি প্রিন্ট করে দেয়ার চেষ্টা করুন, ফটোকপি করে না দেয়াই উত্তম। ফ্রেশাররা দুই পৃষ্ঠা আর অভিজ্ঞরা তিন পৃষ্টার বেশি সিভি লম্বা করা উচিত নয়।
সূত্রঃ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম